কোন কিছু মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য মার্কেটিং এর বিকল্প নেই, মার্কেটিং করার অনেকগুলো পদ্ধতি আছে, তবে সব পদ্ধতি সহজ কিংবা কার্যকরী নয়। আবার কিছু পদ্ধতি আছে অনেক ব্যয়বহুল, যা সাধারণ কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই প্রতিষ্ঠান ভেদে মার্কেটিং এর ধরণ ও আলাদা হয়। কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মার্কেটিং করে আবার কেউ বিনা পয়সায় মার্কেটিং করে, এতো সব মার্কেটিং এর প্রতিযোগিতায় ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, ছোট বড়ো সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতি ঝুঁকেছে, কারণ এটা অনান্য মার্কেটিং এর চেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী। এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে কথা বলব ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কত প্রকার ও কিভাবে করবেন, আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রতি জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আশাকরি পুরো আর্টিকেলটি পড়বেন।
মার্কেটিং কাকে বলে?
কোন ব্যবসা কিংবা ব্র্যান্ড তাদের সেলস বা ক্রেতা বৃদ্ধির জন্য, কোন প্রতিষ্ঠান বা সার্ভিস প্রোভাইডার যখন তাদের অডিয়েন্স বৃদ্ধির জন্য নিজেদের পণ্য অথবা সার্ভিস কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রসার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রচারণা চালায়, সেই প্রচারণাকে মার্কেটিং বলে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
কোন প্রতিষ্ঠান যখন প্রচলিত ধারায় তাদের পণ্য বা সেবার মার্কেটিং না করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মার্কেটিং করে তখন সেটাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি স্যোশাল মিডিয়া কিংবা গুগল অ্যাডওয়ার্ড অথবা ভিন্ন কোন উপায় যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত এসবের দ্বারা পণ্য বা সেবার প্রচার করাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। আপনারা ফেসবুক ব্যবহার করার সময় অনেক পেজে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিক্রির পোষ্ট দেখে থাকেন এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় বিভিন্ন অ্যাডস দেখেন, অথবা কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করলেও অ্যাডস দেখেন এগুলো সবই ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতাভুক্ত।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?
বর্তমান যুগ হলো ইন্টারনেটের যুগ, এখনকার যুগে মানুষ অনেক কাজই ডিজিটাল ভাবে করে থাকে। কারণ ডিজিটাল ভাবে কাজ করা অনেক সহজ হয়ে গেছে, তাছাড়া ডিজিটাল ভাবে কাজ করলে মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়। এই ডিজিটালের ছোঁয়া মার্কেটিংএ ও লেগেছে, ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষ এখন ডিজিটাল ভাবে মার্কেটিং করতে পারে। কারণ লক্ষ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত আছে, তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের কাছে খুব সহজেই নিজের পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে তুলে ধরা যায়। শুধু নিজের পণ্য নয় অন্যের পণ্যের মার্কেটিং করে ভালো টাকা আয় করা যায়, তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এতো জনপ্রিয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং কোথায় শিখবেন?
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য আপনি কয়েকটি প্লাটফর্ম বেছে নিতে পারবেন, সেগুলো হলো :
ই-লার্নিং ওয়েবসাইট
ই-লার্নিং ওয়েবসাইটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কোর্স পাওয়া যায়, সেসব প্লাটফর্মগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স ও থাকে। আপনি চাইলে এসব প্লাটফর্ম থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স কিনে কাজ শিখতে পারবেন। দেশি বিদেশি অনেক ধরণেরই ই-লার্নিং ওয়েবসাইট আছে, বাংলাদেশি প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হলো বহুব্রীহি। আপনি চাইলে এই ওয়েবসাইটে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে কাজ শিখতে পারবেন।
আপনার যদি ভালো ইংরেজি বোঝার দক্ষতা থাকে তাহলে
এসব প্লাটফর্ম বেছে নিতে পারেন।
আইটি ইনস্টিটিউট
বিভিন্ন আইটি ইনস্টিটিউট এ ভর্তি হয়ে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারবেন। এতে করে আপনি সরাসরি হাতে কলমে তাদের কাছ থেকে কাজ শিখতে পারবেন এবং কোর্স করা শেষ হলে তাদের কাছে সার্টিফিকেটও পাবেন। বাংলাদেশে জনপ্রিয় দুটি আইটি ইনস্টিটিউট হলো
ইউটিউব
ইউটিউব শুধু সময় নষ্ট করার প্লাটফর্ম নয়, আপনি চাইলে ইউটিউব থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারবেন। চাইলে ইউটিউব থেকেও আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য আপনি চাইলে simplilearn ইউটিউব চ্যানেল এর learn digital marketing প্লেলিস্ট থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারবেন।
কয়েকটি জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি
ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বড়ো একটি সেক্টর, এর ভেতরে অনেক ধরনের কাজ আছে, এর যে কোন একটা কাজ শিখেও আয় করা যায়। পুরো ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা অনেক সময়ের ব্যাপার। এখানে কয়েকটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
বিভিন্ন ধরনের স্যোশাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করে যে মার্কেটিং করা হয় তাকে স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং বলা হয়। বর্তমানে সব ধরনের মানুষদের কাছে এই পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয়, কারণ সবাই এখন স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে।
এসইও
এসইও (SEO) এর পূর্ণ রূপ হলো Search Engine Optimization অর্থাৎ কোন ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজকে সার্চ ইঞ্জিনে অপ্টিমাইজ বা প্রদর্শন করাকেই এসইও বলে। ওয়েবসাইটে বেশি পরিমাণ ভিজিটর পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ইসইও। আপনার যদি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থাকে তাহলে এসইও করে সেটার সেলস বৃদ্ধি করতে পারবেন।
এসইএম
কোন ওয়েবসাইটকে যখন টাকার বিনিময়ে সার্চ ইঞ্জিনে অপ্টিমাইজ করা হয় তখন তাকে এসইএম (SEM) বা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং বলা হয়। ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বহুল ভাবে প্রচলিত।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অন্যের পণ্যের মার্কেটিং করে যদি কোন কিছু বিক্রি করা যায় তখন তাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। মনে করুন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের কোন পণ্য মার্কেটিং করে বিক্রি করে দিলেন, বিনিময়ে বিক্রেতা সেখান থেকে আপনাকে কিছু টাকা কমিশন দিল এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আপনি এই কাজ অনলাইনেও করতে পারবেন। বিক্রেতার ওয়েবসাইটের অ্যাফিলিয়েট লিংক আপনি আপনার ওয়েবসাইট কিংবা কিংবা অন্য কোথাও পোষ্ট করবেন, এখন সেই লিংকে প্রবেশ করে কেউ যদি পণ্য কিনে তাহলে আপনি কিছু টাকা কমিশন পাবেন।
ইমেইল মার্কেটিং
সম্ভাব্য অডিয়েন্সদের ইমেইল অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে ইমেইল পাঠিয়ে যে মার্কেটিং করা হয় তাকে ইমেইল মার্কেটিং বলে। বিশেষ করে ডিজিটাল প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
ডিজিটাল মার্কেটিং করে লাভ কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে আপনি আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন, অনেকেই আছে যারা চাকরি ছেড়ে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে নিজের বা অন্যের পণ্যের মার্কেটিং করছে, এটি শিখলে আপনি তিন ভাবে আয় করতে পারবেন। সেগুলো হলো
নিজের ব্যবসার উন্নতি
আপনার যদি নিজের কোন ব্যবসা থাকে তাহলে নিজের ব্যবসার সেলস বৃদ্ধি করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারবেন। এতে করে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে ধীরে ধীরে অনেক মানুষ জানতে পারবে, এবং আপনি যদি ভালো সেবা দিতে পারেন তাহলে মানুষ আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে।
চাকরি
আপনার যদি নিজের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকে, তাহলে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন, এখন তাহলে বলতে পারেন তাহলে চাকরি ছেড়ে লাভ কি? আবার তো চাকরি করতেই হবে। এ ব্যাপারে আমি বলব, জিডিটাল মার্কেটিং করে চাকরি করলে আরো বেশি বেতনে চাকরি করতে পারবেন, এছাড়াও এই কাজের ধরন অনান্য চাকরির চেয়ে আলাদা।
ফ্রিল্যান্সিং
বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় একটি পেশা হলো ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অনেক ধরনের কাজ রয়েছে। এসব কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ শিখে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে আপনি অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
- ইমেইল মার্কেটিং কি? কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করবেন?
- ডাটা এন্ট্রি কি? কিভাবে ডাটা এন্ট্রি শিখবেন?
- সিপিএ মার্কেটিং কি? কিভাবে সিপিএ মার্কেটিং করে আয় করবেন?
- গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? কিভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন?
- ব্লগিং কি? কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন?
- ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কিভাবে শিখবেন?
- স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কিভাবে এবং কেন করবেন?
আমাদের শেষ কথা
মার্কেটিং এমন একটি পেশা যা কখনো বিলুপ্ত হবে না, ইন্টারনেট যতোদিন থাকবে ডিজিটাল মার্কেটিংও ততোদিন থাকবে। ইন্টারনেট কোনদিন ধ্বংস হবে না, তাই ডিজিটাল মার্কেটিংও কোনদিন বিলুপ্ত হবে না। যতই দিন যাচ্ছে, ততই মানুষ বাড়ছে আর মানুষের চাহিদা বাড়ছে। সে জন্য দিন দিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেড়েই চলেছে তাই বলা যায় এই কাজের চাহিদা দিন দিন শুধু বাড়বেই। আপনি যদি অনলাইন ভিত্তিক ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং হলো আপনার জন্য সেরা উপায়। এটি এমন একটি কাজ যা করলে আপনাকে রোদে পুড়তে হবে না, বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না, এই কাজে আপনার কোন বস থাকবে না যে আপনাকে ঝাড়ি দিবে। আপনি স্বাধীন ভাবে আপনার কাজ করে যেতে পারবেন, আপনাকে শুধু কাজ চালিয়ে যেতে হবে, কিন্তু আপনি যদি অলসতা করেন তাহলে উন্নতি করতে পারবেন না।