ব্লগ কি?
ব্লগ (blog) হলো একজন ব্যক্তির দ্বারা তৈরী একটি দিনলিপি বা পত্রিকা। এবং যারা ব্লগিং ওয়েবসাইট তৈরি করে লেখে তাদের ব্লগার বলা হয়। অর্থাৎ একটি ব্লগে একজন মানুষ তার সকল জ্ঞান লেখনীর মাধ্যমে শেয়ার করে। ইন্টারনেটে প্রচুর ব্লগিং ওয়েবসাইট গড়ে উঠেছে।এখন এসব ব্লগার শুধু নিজের জ্ঞান শেয়ার করার জন্য ব্লগার হয় না। একজন ব্লগার সাধারণত কিছু আয় করার আশায় ব্লগার হয়। হ্যা আপনি ঠিকই শুনেছেন, ব্লগে লেখার মাধ্যমেও আয় করা যায়। কিন্তু কিভাবে ব্লগে লিখে আয় করবেন? আজ আমি আপনাদের সাথে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। তবে ব্লগ থেকে আয় করতে হলে প্রথমে একটি ব্লগ তৈরি করতে হবে। কিন্তু কিভাবে একটি ব্লগ তৈরি করা যায়?
ডাটা এন্ট্রি কি? কিভাবে ডাটা এন্ট্রি শিখে আয় করবেন?
কিভাবে ব্লগ তৈরি করতে হয়?
বর্তমানে ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্লাটফর্ম আছে। তবে এসব প্লাটফর্ম থেকে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে কিছু খরচ করতে হয়। কিন্তু ব্লগার (blogger) নামক একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্মের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই কোনো ডোমেইন হোস্টিং খরচ ছাড়াই ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। তাছাড়া ব্লগারের ফ্রি ডোমেইনে অ্যাডসেন্স এপ্রুভ পর্যন্ত দেওয়া হয়।অ্যাডসেন্স সম্পর্কে একটু পরে আলোচনা করার হবে। তবে এটা যেনে রাখুন যে ব্লগারে এবং অ্যাডসেন্স দুটি প্লাটফর্মই গুগলের। মুলত এ কারণেই ব্লগারের ফ্রি ডোমেইনে গুগল অ্যাডসেন্স এপ্রুভ দেয়। তাছাড়া আরেকটি উপায়ে ব্লগ তৈরি করা যায়।
বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস একটি উন্মুক্ত এবং জনপ্রিয় সিএমএস ( কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম )। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েও আপনি প্রফেশনাল মানের ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেস ফ্রি হলেও এটি দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে আপনাকে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে। ডোমেইন হোস্টিং এর দাম যেহেতু অনেক তাই আপনার অনেক বাজেট থাকতে হবে।
তবে ওয়ার্ডপ্রেসে আপনি প্রচুর এক্সট্রা সুবিধা পেয়ে যাবেন যার মাধ্যমে আপনি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট ছাড়াও এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট লিখতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেসের আরেকটি বড় সুবিধা প্লাগইন সিস্টেম। প্লাগইন ওয়ার্ডপ্রেসের ছোট ছোট অ্যাডন ফিচার যেগুলো আপনাকে এক্সট্রা সুবিধা দেবে।
তাছাড়া আপনি পিএইচপি স্ক্রিপ্টের মাধ্যমেও ব্লগ তৈরি পারেন। এক্ষেত্রেও আপনাকে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে।
ডোমেইন কি কত প্রকার কিভাবে কিনবেন?
ব্লগ থেকে আয়
একটি ব্লগ থেকে বিভিন্ন উপায়ে আয় করা যায়। নিচে ব্লগ থেকে আয় করার কিছু প্রধান উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. গুগল অ্যাডসেন্স
বেশিরভাগ মানুষ নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে সাধারণত গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করে থাকে। বর্তমানে গুগল অ্যাডসেন্স একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক।
গুগল অ্যাডসেন্সের সাহায্যে ব্লগে অ্যাড বা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করা যায়। বর্তমানে প্রায় বেশিরভাগ ব্লগার এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করে। তবে এডসেন্স এপ্রুভ পেতে হলে আপনার ব্লগ কিছু নিয়ম মেনে তৈরি করতে হবে। নিচে নিয়ম গুলো দেওয়া হলো।
এডসেন্স এপ্রুভ পেতে হলে আপনাকে যেসব বিষয় মেনে চলতে হবে:-
● গুগলের এডসেন্স পলিসি অনুযায়ী আপনার ব্লগ হতে হবে।
● ব্লগে কপিরাইট মুক্ত ইউনিক কন্টেন্ট থাকতে হবে।
● এডসেন্সের প্রোগ্রাম পলিসি ভঙ্গ করে এমন কোনো কন্টেন্ট থাকা যাবে না।
● ওয়েবসাইটে কোনো ব্রোকেন লিংক রাখা যাবে না।
● পাইরেটেড কন্টেন্ট বা টুল ওয়েবসাইটে থাকা যাবে না।
● এডসেন্স আবেদনের পূর্বে অন্য কোনো বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের বিজ্ঞাপন থাকা যাবে না।
● এডসেন্স আবেদনের পর ওয়েবসাইট কাস্টমাইজ করা যাবে না।
সাধারণত এই নিয়ম গুলো মেনে চললেই আপনি এডসেন্স এপ্রুভ পাবেন অর্থাৎ এডসেন্স এপ্রুভ পেয়ে গেলে আপনি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। তবে আপনার প্রশ্ন হতে পারে এডসেন্সের টাকা কিভাবে আমার হাতে আসবে? এটি বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে আসবে না অন্য কোনো মাধ্যমে? এরকম প্রশ্ন আপনার মনে হতে পারে।
এডসেন্সের টাকা আপনার হাতে একটি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট করা যায় এমন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে আসবে। যেমন ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক ইত্যাদি। তবে প্রথমবার এডসেন্সের টাকা নিতে হলে আপনাকে কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
প্রথমে ব্লগ থেকে আপনার যখন ১০ ডলার এডসেন্সের মাধ্যমে আয় হবে তখন আপনার ঠিকানাই এডসেন্স একটি এড্রেস ভেরিফিকেশন পিন পাঠাবে। এই পিন আপনার এডসেন্স একাউন্টে বসাতে হবে। এরপর এড্রেস ভেরিফাই হয়ে গেলে আপনার একাউন্টে যখন ১০০ ডলার হয়ে যাবে তখন আপনি ব্যাংক একাউন্ট যোগ করে টাকা তুলতে পারবেন।
এরপর প্রত্যেক মাসে আপনার একাউন্টে এডসেন্স সয়ংক্রিয় ভাবে টাকা পাঠিয়ে দেবে। এভাবেই আপনি গুগল এডসেন্সের টাকা হাতে পাবেন।
২. অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক
গুগল এডসেন্স ছাড়াও বর্তমানে কিছু বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এসব বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের বিজ্ঞাপন দেখিয়েও আপনি ব্লগের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। তাছাড়া এডসেন্স ছাড়া যেসব বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক আছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক থেকে এপ্রুভ পাওয়া সহজ।
তবে কিছু কিছু বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক থেকে এপ্রুভ কঠিন। যেমন ইজোয়েক। ইজোয়েক থেকে এপ্রুভ পেতে হলে আপনার ব্লগে ১০০০০ ইউনিক মাসিক ভিজিটর থাকতে হবে। ইজোয়েক সাধারণত একটি অপ্টিমাইজড এড নেটওয়ার্ক যেটি আপনার সাইটের স্পিড ঠিক রেখে হাই সিপিসি ( ক্লিক পার কস্ট ) সমৃদ্ধ বিজ্ঞাপন দেখায়। যেহেতু ইজোয়েক হাই সিপিসি সমৃদ্ধ বিজ্ঞাপন দেখায় তাই ইজোয়েক থেকে আয় অনেক বেশি হয়।
ইজোয়েক ছাড়া আরোও কিছু বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক আছে যেগুলোর বিজ্ঞাপন আপনি ব্লগে দেখিয়ে আয় করতে পারবেন। তবে এসব বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক কিছু খারাপ বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে যেটি আপনি একদমই চাইবেন না। তবুও চাইলে ব্যবহার করতে পারেন। নিচে কিছু এরকম বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের নাম উল্লেখ করা হলো।
● Ezoic
● Adsterra
● Adspushup
● Media.net
● Propeller Ads
৩. আফিলিয়েট মার্কেটিং
অনেকে আফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করে। বর্তমানে আফিলিয়েট মার্কেটিং একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের শাখা। আফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির পন্য কেও বিক্রি করে দিলে সেই পন্যের উপর কিছু কমিশন দেয়। অনেক কোম্পানি আছে যারা তাদের পন্য বিক্রি করে দিলে প্রচুর কমিশন দেয়। এতে দুই পক্ষেরই কিছুটা করে লাভ হয়। বর্তমানে অনেকে ব্লগের মাধ্যমে আফিলিয়েট মার্কেটিং করে।
সাধারণত একজন তার ব্লগের নিশের উপর ভিত্তি করে আফিলিয়েট মার্কেটিং করে। অর্থাৎ তার ব্লগ যদি ফ্যাশন রিলেটেড হয় তাহলে সে আফিলিয়েট মার্কেটিং করবে। এখন নিশের উপর আফিলিয়েট মার্কেটিং কেনো করবেন? ধরুন আপনার ব্লগ ফুড রিলেটেড। এখন আপনি যদি সেখানে ফ্যাশন রিলেটেড আফিলিয়েট মার্কেটিং করেন তাহলে সেই পন্য কেও কিনবে না। তাই ব্লগের নিশের উপর ভিত্তি করেন আফিলিয়েট মার্কেটিং করা অত্যন্ত জরুরি।
৪. ডিজিটাল মার্কেটিং
আপনি যদি নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করেন তাহলে নিজের ব্লগের মাধ্যমে সেটির মার্কেটিং করতে পারেন। বর্তমানে ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ের থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং বেশি জনপ্রিয়। কারন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কম টাকাই অনেক প্রচার করা যায় তাছাড়া একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কাস্টমার পাওয়া যায়। এখন আপনার ব্লগ যদি ফুড রিলেটেড হয়ে থাকে তাহলে আপনি খাবারের উপর ব্যবসা শুরু করতে পারেন।যেহেতু আপনার ব্লগ খাবারের উপর তৈরি তাই সেখানে যাদের খাবার পছন্দ তারাই ভিজিট করে অতএব আপনার খাবারের ব্যবসার জন্য আপনি অনেক কাস্টমার পেয়ে যাবেন।
৫. স্পন্সর বা পেইড প্রমোশন
আপনার ব্লগে যদি প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি স্পন্সর নিয়ে আয় করতে পারেন। বর্তমানে অনেকে তাদের পন্য বা সার্ভিস বহুল প্রচার করার জন্য স্পন্সর দিয়ে থাকে। তারা সাধারণত কোনো জনপ্রিয় মাধ্যম খোজে এবং সেই জনপ্রিয় মাধ্যমের প্রধানের সাথে আলোচনা করে স্পন্সর দেয়। এর জন্য যে পন্য বা সার্ভিস প্রচার করবে সে কিছু টাকা দেই। এখন আপনার ব্লগে যদি প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর থাকে তাহলে অনেকে আপনাকে স্পন্সর দেবে এবং আপনি আয় করতে পারবেন। স্পন্সর পাওয়ার সবথেকে সহজ উপায় হলো স্পন্সর অফার দেওয়া এবং যে স্পন্সর দেবে সে যেনো আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারে তার একটি মাধ্যম রাখা।
আজ এই পর্যন্তই। আশাকরি আপনাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। কোনো প্রশ্ন অথবা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট করুন। বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
ধন্যবাদ সবাইকে।