বিশ্বব্যাপী যতগুলো স্যোশাল মিডিয়া সাইট আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো ফেসবুক। এটি ব্যবহার করা সহজ এবং ফ্রী হওয়ার ফলে সব ধরনের মানুষই ফেসবুক ব্যবহার করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল কার্যকলাপ ফেসবুকে শেয়ার করি এবং অন্যের স্ট্যাটাসে নিজের অনুভূতি ও মন্তব্য প্রকাশ করি। একজন মানুষের ফেসবুকীয় কার্যকলাপ দেখে কিছুটা হলেও তার ব্যাক্তিত্ব অনুধাবন করা যায়। আমরা যদি একটু খেয়াল করে দেখি তাহলে বুঝতে পারবো ফেসবুকে নিজের অজান্তেই আমরা নিজেকে সর্বজনীন ভাবে আনস্মার্ট ও বাজে ভাবে উপস্থাপন করছি। যদি একটু সতর্ক থেকে ফেসবুকের কার্যকলাপ চালিয়ে যাই তাহলে ফেসবুকে স্মার্ট হতে পারব। আজকের এই আর্টিকেলে আমি এমন কিছু কৌশল আপনাদের সাথে শেয়ার করব, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি ফেসবুকে নিজেকে স্মার্ট ও ব্যাক্তিত্ববান হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন। আপনি যদি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে ফেসবুকে স্মার্ট হওয়ার উপায় আর্টিকেলটি অবশ্যই পড়বেন।
কেন ফেসবুকে স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন?
বাস্তব জীবনে একজন স্মার্ট মানুষকে সবাই পছন্দ করে, তাই সবাই স্মার্ট হতে চেষ্টা করে। তেমনি ভাবে একটি সাজানো গোছানো স্মার্ট ফেসবুক প্রোফাইলও মানুষ পছন্দ করে। আপনার ফেসবুক প্রোফাইল যদি অসুন্দর হয় তাহলে মানুষ আপনাকে অসামাজিক ভাবতে পারে, তা আপনি যতই স্মার্ট ব্যাক্তি হোন। অনেক জায়গায় চাকরিদাতারা চাকরি দেওয়ার আগে প্রার্থীর ফেসবুক প্রোফাইল চেক করে। আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে যদি হাবিজাবি আবেগী পোস্ট, নোংরা পোস্ট ও ছবি দেওয়া থাকে তাহলে মানুষজন আপনাকে নেতিবাচক মনের মানুষ ভাবতে পারে, আরো অনেক কারণেই ফেসবুকে স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন। এই সব বিষয়েই আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব।নাম । Name
আপনার বাবা-মা আপনার জন্য সুন্দর একটি নাম দিয়েছেন, সেই নাম ধরে আপনাকে ডাক দিলে আপনি জবাব দেন। কিন্তু আমি যদি আপনাকে ভিন্ন নামে ডাকি আপনি আমার সাথে রাগ করবেন। কিন্তু ফেসবুকের ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষজন আজব আজব নাম দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে, যেগুলো অদ্ভুত শোনা যায়। এমন কিছু কমন নাম হলো অভিমানী বালিকা, অবুঝ বালক, এঞ্জেল সাদিয়া, পাগল মন, রাতের জোনাকি এসব নাম অদ্ভুত শোনা যায়। একজন স্মার্ট ব্যাক্তি কখনো এমন নাম ব্যবহার করে না, কেবল মাত্র ফেক প্রোফাইলের মানুষেরাই এমন আজব নাম ব্যবহার করে। তাছাড়া এধরনের নাম ফেসবুক কর্তৃপক্ষও পছন্দ করে না, এসব নামধারী আইডি সহজেই ডিজেবল হয়ে যায়। আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে যদি এমন নাম থাকে তাহলে আজই তা পরিবর্তন করে নিজের NID কার্ডের সাথে মিল রেখে নাম দিন। তাছাড়া ফেসবুক যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম তাই নামটা ইংরেজিতে দেওয়া উচিত।
প্রোফাইল পিকচার । Profile picture
নামের মতো অনেকেই ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে অদ্ভুত ছবি ব্যবহার করে। ফুল, পাখি, প্রকৃতি, বিশেষ কোন উক্তি এধরনের ছবি অনেকেই ব্যবহার করে। কিন্তু আপনি যদি একজন প্রফেশনাল ব্যাক্তির প্রোফাইল ছবি দেখেন তাহলে দেখবেন তিনি নিজের ছবি ব্যবহার করেন। তাই আজেবাজে ছবি ব্যবহার না করে নিজের সুন্দর একটি ছবি প্রোফাইল ফটো হিসেবে ব্যবহার করুন, তবে কোন ফুল ফটো প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার না করে পাসপোর্ট ছবির মতো কোন ছবি ব্যবহার করুন। ফুল ছবিতে অনেক সময় মানুষকে সহজে চেনা যায় না, কিন্তু ছোট ছবি ব্যবহার করলে সহজেই বুঝা যায় এটা কার ছবি। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে যেন কোন দৃষ্টিকটু দৃশ্য না থাকে। প্রোফাইল ফটোর সাইজ ঠিক রেখে ব্যবহার করতে পারলে উত্তম তবে সাইজ ঠিক না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। ফেসবুক প্রোফাইল ছবির সঠিক সাইজ হলো ৩৬০×৩৬০ পিক্সেল এটা হলে ভালো তবে মিনিমাম সাইজ হলো ১৮০×১৮০ পিক্সেল।অ্যাবাউট । About
ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার অপশন হলো অ্যাবাউট। প্রত্যেকের উচিত সঠিক তথ্যগুলো দেওয়া। কিন্তু অনেকেই ভুলভাল তথ্য দিয়ে স্মার্ট হতে গিয়ে অভার স্মার্ট কিংবা আনস্মার্ট হয়ে যায়। কাক যতই ময়ূরের পুচ্ছ লাগাক কাক কিন্তু ময়ূর হতে পারবে না তেমনি ভাবে আমি যতই Warks at Facebook দেই না কেন, মানুষ কিন্তু তা বিশ্বাস করবে না। ফেসবুকের অ্যাবাউট সেকশন বুঝে শুনে পূরণ করা উচিত। সাধারণত মানুষ অ্যাবাউটে যে ভুলগুলো করে তা হলো অন্যের ভুলভাল অ্যাবাউট দেখে নিজের অ্যাবাউটেও সেসব তথ্য দেয়। যেমন কাজের ক্ষেত্রে অনেকেই Warks at Facebook, Warks at Facebook VIP Account, বাপের হোটেলে খাই মায়ের কোলে ঘুমাই এসব দেয়। পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েও Studied at University of Dhaka এসব লেখে। আর জন্মদিনের বেলায় একটা বিষয় দেখা যায় যে ফ্রেন্ডলিস্টের অধিকাংশ মানুষের জন্মদিন জানুয়ারি মাসের এক তারিখ, এসব ভুল তথ্যের কারণে বুঝা যায় প্রোফাইলটি প্রফেশনাল কোন ব্যাক্তির প্রোফাইল নয়। তাই ফেসবুকের অ্যাবাউট সেকশন পূরণের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন এবং যদি কোন ভুল তথ্য থাকে সেটা ঠিক করুন।ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
ইউজার নাম । User name
ফেসবুকের ইউজার নামের বেলায় স্মার্ট হওয়া উচিত। ফেসবুকে প্রত্যেক প্রোফাইলে ডিফল্ট ভাবে একটি ইউজার নাম দেওয়া থাকে, সেটা কাস্টমাইজড করে নিজের মতো করে নেওয়া উচিত। কারণ কেউ যদি আপনার ফেসবুক ইউজার নাম জানতে চায় তাহলে আপনাকে ফেসবুকে ঢুকে ইউজার নাম বের করে তারপরে দেখে সেটা বলতে হবে। কিন্তু আপনি যদি কাস্টমাইজড করে সুন্দর একটি নাম দেন তাহলে সহজেই বলে দিতে পারবেন, যেমন আমার ফেসবুক ইউজার নাম হলো https://www.facebook.com/mohiuddinramzan1999 এই নামটি সহজে মনে রাখা যায়, কিন্তু আমি যদি কাস্টমাইজড না করতাম তাহলে এটা https://www.facebook.com/profile.php?id=100010037****** এমন অনেকগুলো সংখ্যাওয়ালা হতো যেটা আমার পক্ষে মনে রাখা কঠিন।বায়ো । Bio
ফেসবুকে বায়ো হলো নিজেকে মাত্র কয়েকটি শব্দে উপস্থাপন করা। এখানে মাত্র ১৫০ ক্যারেক্টার লেখা যায়। তাই এখানে অতি সংক্ষেপে নিজের সম্পর্কে লিখুন যে আপনি কে এবং কি করেন?পোস্ট । Post
আমরা যারা ফেসবুক ব্যবহার করি তারা সবাই বিভিন্ন ধরনের পোষ্টের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থা প্রকাশ করি। আমাদের এমন কোন কিছু পোষ্ট করা উচিত নয় যেটা দেখে মানুষ আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবে কিংবা আমাদের দূর্বল ভাববে। অনেকেই না বুঝে অনেক আবেগী কথাবার্তা, নোংরা কথাবার্তা লিখে পোষ্ট করে যেটা সে মুখে বলতে লজ্জা পাবে। অনেকেই আবার নোংরা ছবি কিংবা ভিডিও পোষ্ট করে থাকে অথচ তার খেয়ালই থাকে না যে তার ফ্রেন্ডলিস্টে আশেপাশের পরিচিত মানুষগুলো আছে, যাদের সামনে এসব বলতে সে লজ্জা পাবে। তাছাড়া যেসব মানুষ ফেসবুকে এসব পোষ্ট করে তাদের একদিন ছেলে মেয়ে হবে। তার ছেলে মেয়েরা যখন বড় হয়ে বাবা মায়ের ফেসবুক প্রোফাইলে ছ্যাঁকা খাওয়া কিংবা নোংরা কোন পোষ্ট দেখবে তখন কি তারা লজ্জা পাবে না? অনেকেই আবার ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোষ্ট কিংবা গুজব ছড়িয়ে বেড়ায় যেটা রীতিমতো অন্যায়। আমাদের এসব বাজে অভ্যাস পরিহার করা উচিত। ফেসবুকে এমন পোষ্ট করা উচিত যেটা আমরা মানুষের সামনে নির্দ্বিধায় বলতে পারি।ট্যাগ । Tag
কয়েকটি বেশি লাইক পাওয়ার জন্য মানুষকে ট্যাগ না করে ট্যাগ ছাড়া জিরো লাইক পাওয়া উত্তম। ফেসবুকে একটি বিরক্তিকর শব্দ হলো ট্যাগ। অনেকেই মনে করে ট্যাগ করলে বেশি লাইক-কমেন্ট পাওয়া যায়, কিন্তু আসলে মানুষকে ট্যাগ করলে স্বাভাবিকের চেয়ে লাইক আরো কম পাওয়া যায়। তাছাড়া কাউকে ট্যাগ করলে সে বিরক্ত হয়, অনেকে আবার ট্যাগ করার ফলে আনফ্রেন্ড কিংবা ব্লক করে দেয়। ট্যাগ তাকেই করা উচিত যে আপনার পোষ্টের কার্যকলাপের সাথে জড়িত আছে, অন্যথায় কাউকে ট্যাগ করে আনস্মার্ট ব্যাক্তিত্বের পরিচয় দিবেন না।লাইক । Like
কারো পোষ্টের অবস্থা বুঝে রিয়েক্ট করা উচিত। কারো স্যাড পোষ্টে হা হা রিয়েক্ট দেওয়া স্মার্ট ব্যাক্তির লক্ষণ নয়। যে পোষ্টে যে রিয়েক্ট উপযুক্ত সেখানে সেই রিয়েক্ট ই করতে হবে। ফেসবুকের পোষ্টে রিয়েক্ট করা নিয়ে একবার এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দলের মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। তাই ভুলভাল রিয়েক্ট করে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিবেন না।ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য তিনটি সেটিংস
কমেন্ট । Comment
একটি মজার ঘটনা মনে পড়লো। একটি মেয়ে ফেসবুকে একটি ছবি পোষ্ট করেছিল। সেখানে অনেকেই অনেক ধরণের কমেন্ট করতে লাগলো যেমন wow, nice, cute, beautiful ইত্যাদি। একটি ছেলে ভাবলো আমি এদের মতো সস্তা কমেন্ট না করে বড়ো করে একটি কমেন্ট করি। তাই সে লিখলো, "এই ছবিতে তোমাকে দারুন লাগছে।" কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর মেয়েটি ছেলেটিকে ব্লক করে দিল। কারণ জানতে ছেলেটি মোবাইলে এমবি কিনে অন্য আইডি দিয়ে মেয়েটির প্রোফাইলে গিয়ে দেখল মেয়েটি একটি কিউট কুত্তার ছবি আপলোড করেছিল ফ্রী ফেসবুক ব্যবহার করার ফলে ছেলেটি বুঝতে পারেনি। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় কমেন্ট করার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া উচিত, কোন কিছু না বুঝে কমেন্ট করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কোন কমেন্ট করার আগে পুরো পোষ্ট পড়বেন। এবং কোন ধরনের নেতিবাচক কমেন্ট না করে উৎসাহমূলক কমেন্ট করবেন, কারো ভুল ধরার ক্ষেত্রে ভদ্র ভাষায় বুঝিয়ে ভুল ধরে দিবেন। এর ফলে পোষ্টকারী আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করবে।স্টোরি । Story
ফেসবুকের স্টোরিতে অনেকেই অনেক ধরণের ছবি আপলোড করে, অনেকেই দেখি নোংরা ছবি আপলোড করে যেটা তার নোংরা মানসিকতার পরিচয় বহন করে। আবার অনেকেই আছে নামিদামি রেস্টুরেন্টে গেলে সেটার ছবি, কিংবা খাবারের ছবি স্টোরিতে আপলোড করে যা একজন ম্যাচিউর মানুষের করা উচিত নয়।মেসেজ । Message
কাউকে মেসেজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সালাম দিয়ে আপনার কথা শুরু করবেন। ভিন্নধর্মাবলম্বী কিংবা ফরেনার হলে Hi/Hello দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে বাংলিশে লিখে কিছু লিখবেন না। অনেকেই আছে বাংলিশে এবং সাথে শর্টকাট করে লিখে যেমন, hlw, gd mrng. tmi kmn aco. ami vlo aci. gd n8 এসব লিখে মূর্খতার পরিচয় দিবেন না। বাংলা ভাষায় লিখলে শুদ্ধ বাংলায় লিখবেন, ইংরেজিতে লিখলে সব কথা ইংরেজিতেই লিখবেন। এটাও খেয়াল রাখবেন যে বানান ঠিক আছে কিনা।মেসেঞ্জারের ১৫ টি টিপস এবং ট্রিকস
এই আর্টিকেলে আমি ফেসবুকের কমন ভুলগুলো তুলে ধরলাম, ছোটখাটো আরো অনেক কিছু বাদ পড়তে পারে। মূলকথা হলো একজন ম্যাচিউর মানুষ ফেসবুকেও ম্যাচিউরের মতো আচরণ করে। যে খারাপ এবং আনস্মার্ট সে খারাপই থাকবে, তার জন্য এই আর্টিকেল কোন কাজে আসবে না কিন্তু যারা নিজের অজান্তে ভুলগুলো করে আসছে তারা লেখাটি পড়ার পর নিজেকে শুধরাবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজেকে ফেসবুকে স্মার্ট বলতে পারবো না তবে ততোটা আনস্মার্টও নয়। আপনার যদি ইচ্ছে হয় আমার ফেসবুক প্রোফাইলটি ঘুরে আসতে পারেন। আমার আইডি নাম Mohiuddin Ramzan