হোস্টিং কি এবং কত প্রকার? কিভাবে হোস্টিং কিনবেন?

আপনি যদি একটি ওয়েবসাইটের কথা অথবা কোন ওয়েবসাইট তৈরি করার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে সর্ব প্রথম আপনার যেটা সম্পর্কে জানতে হবে সেটা হলো ডোমেইন এবং হোস্টিং, এই দুটি ছাড়া কোন প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব নয়। পূর্বের আর্টিকেলে আমরা ডোমেইন কি কত প্রকার এবং কিভাবে কিনবেন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা হোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আপনি যদি ওয়েবহোস্টিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলে আপনার দশ মিনিট সময় ব্যয় করুন, আশাকরি আপনার সময়টা বৃথা যাবে না।

হোস্টিং কি?

হোস্টিং ( Hosting ) হলো এমন একটি ভার্চুয়াল স্টোরেজ যা একটি ওয়েবসাইট লোকাল হোস্ট থেকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ হোস্টিং একটি ভার্চুয়াল মেমরি কার্ডের মতো। তবে একটি মেমরি কার্ডের মাধ্যমে একটি ডিভাইসে আপনি কাজ চালাতে পারবেন। অপরদিকে হোস্টিং এর সাহায্যে যে কেও আপনার ওয়েবসাইটের সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে, একটি দোকানের কথা চিন্তা করুন। দোকানের জন্য জায়গা, নাম এবং পণ্যসামগ্রী প্রয়োজন। ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ডোমেইন হলো নাম, হোস্টিং হলো জায়গা এবং পণ্যসামগ্রী হলো কন্টেন্ট। আশা করি হোস্টিং কি এটা বুঝতে পেরেছেন। এখন আমরা হোস্টিং কত প্রকার এবং কি কি? বাংলাদেশ থেকে কিভাবে হোস্টিং কিনবেন? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন আমাদের আজকের হোস্টিং বিষয়ক আলোচনা শুরু করি।

হোস্টিং কি কত প্রকার এবং কিভাবে কিনবেন

হোস্টিং কত প্রকার?

হোস্টিং এর প্রধান কিছু প্রকারভেদের বিস্তারিত আলোচনা নিচে করা হলো।

১. শেয়ার্ড হোস্টিং

অনেকগুলো ওয়েবসাইট যখন শুধুমাত্র একটি হোস্টিং সার্ভারে হোস্ট থাকলে তাকে শেয়ার্ড হোস্টিং বলে। বর্তমানে বেশিরভাগ লোক যারা ওয়েবসাইট তৈরি করে তারা সাধারণত শেয়ার্ড হোস্টিং ব্যবহার করে। এর প্রধান কারণ শেয়ার্ড হোস্টিং এর মুল্য সাধারণত কম হয় তাছাড়া এটি ব্যবহার করাও সহজ। তবে শেয়ার্ড হোস্টিংএ অসুবিধাও আছে। প্রথমত শেয়ার্ড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে অনেক গুলো ওয়েবসাইট একটি হোস্টিং সার্ভারে হোস্ট থাকে যার কারণে একসাথে অনেক ভিজিটর আসলে ওয়েবসাইট স্লো এমনকি কখনো কখনো অফলাইন হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া আপনার ওয়েবসাইটের সকল ডাটা হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছে থেকে যায় ফলে থার্ড পার্টি প্রোভাইডার হলে ওয়েবসাইটের ডাটা চুরির আশংকা থাকে।

২. ভিপিএস ( ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার ) হোস্টিং

ভিপিএস অনেকটা শেয়ার্ড হোস্টিং এর মতোই তবে এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট শুধুমাত্র একটি সার্ভারে হোস্ট থাকবে। অর্থাৎ সেই সার্ভারে আপনার ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনো ওয়েবসাইট থাকবে না। আপনি যত ইচ্ছা ওয়েবসাইটে ট্রাফিক ড্রাইভ করলেও স্পিড স্লো অথবা অফলাইন হওয়ার আশংকা খুবই কম। ভিপিএস হোস্টিং নিলে আপনার জন্য আলাদা করে সিপিউ, র‌্যাম, কোর ইত্যাদি দেওয়া হবে। অর্থাৎ একটি ম্যানেজড সার্ভার শুধুমাত্র আপনার ওয়েবসাইটের জন্য তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে ভিপিএস হোস্টিং শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে বেশি দামি। যেহেতু আপনার জন্য আলাদা সার্ভার তৈরি করে দেওয়া হয় তাই ভিপিএস হোস্টিং এর জন্য দাম অনেক বেশি রাখা হয়।

৩. বিডিআইএক্স হোস্টিং

বিডিআইএক্স একটি বাংলাদেশী ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট। যাদের ওয়েবসাইট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের আশেপাশে যে দেশ গুলো আছে সেই দেশগুলো টার্গেট করে তৈরি করা তাদের জন্য বিডিআইএক্স হোস্টিং অনেক প্রয়োজনীয়। বিডিআইএক্স হোস্টিং অন্যান্য হোস্টিং এর মতোই শুধু নেটওয়ার্ক বিডিআইএক্স ব্যবহার করা হয় যার ফলে বাংলাদেশে স্পিড অনেক বেশি পায়। বাংলাদেশ থেকে কেও বিডিআইএক্স হোস্টিং ব্যবহার করা ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে ২০০ গুণ স্পিডে ওয়েবসাইট লোড নেয়। অতএব বুঝতেই পারছেন বিডিআইএক্স হোস্টিং কেনো বাংলাদেশ টার্গেটেড ওয়েবসাইটের জন্য কেনা উচিত। তবে বিডিআইএক্স হোস্টিং এর দাম শেয়ার্ড হোস্টিং এর থেকে বেশি হয়ে থাকে এবং ব্যান্ডউইথ সাধারণত কম পাওয়া যায়।

৪. রিসেলার হোস্টিং

রিসেলার এর বাংলা অর্থ পুনরায় যে বিক্রি করে। অর্থাৎ রিসেলার হোস্টিং হলো হোস্টিং কিনে পুনরায় সেটি বিক্রি করা। বর্তমানে রিসেলার হোস্টিং কিছু হোস্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যেমন WHM, Domain Hosting Reseller, Client area ইত্যাদির কারনে যে কেও ব্যবসা করতে পারছে। এসব হোস্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দিয়ে খুব সহজেই হোস্টিং প্যাকেজ তৈরি সহ ম্যানেজ, আপগ্রেড, ডিলিট, ইনভয়েস কালেক্ট ইত্যাদি করা যায়। তাই বর্তমানে রিসেলার হোস্টিং ব্যবহার করে হোস্টিং ব্যবসা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। আপনি প্রায় সব হোস্টিংগুলোর রিসেল করতে পারেন। তবে শেয়ার্ড হোস্টিং রিসেলার অনেক জনপ্রিয়। তবে রিসেলার হোস্টিং এর কিছু অসুবিধাও আছে। আপনি যদি রিসেলার হোস্টিং কিনে হোস্টিং ব্যবসা শুরু করেন তাহলে কাস্টমার জোগাড় করা অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। যেহেতু হোস্টিং বিজনেস বর্তমানে অনেক সহজ উঠেছে তাই হোস্টিং মার্কেটে প্রচুর প্রতিযোগীতা। তাই হোস্টিং ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে প্রচুর মার্কেটিং করতে হবে।

হোস্টিং কত প্রকার

কয়েকটি বাংলাদেশী হোস্টিং প্রোভাইডার

বর্তমানে বাংলাদেশে ভার্চুয়াল কার্ড বা পেপাল নেই। তাই আমাদের বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি টাইপের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এইসব পেমেন্ট ম্যাথড দিয়ে আপনি ইন্টারন্যাশনাল ওয়েবসাইট গুলোতে পেমেন্ট করতে পারবেন না। তাই আপনি যদি হোস্টিং কিনতে চান তাহলে বাংলাদেশী হোস্টিং প্রোভাইডার দের উপর ভরসা করে কিনতে হবে। বর্তমানে কিছু জনপ্রিয় বাংলাদেশী হোস্টিং প্রোভাইডারদের নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

১. Putul Host

দীর্ঘদিন থেকে পুতুল হোস্ট বিশ্বস্ততার সাথে হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে। পুতুল হোস্ট অনেক কম টাকায় অনেক ভালো প্যাকেজের হোস্টিং দিয়ে থাকে। পুতুল হোস্টের শেয়ার্ড হোস্টিং এবং রিসেলার হোস্টিং এর প্যাকেজ গুলোর ব্যান্ডউইথ, ডাটাবেজ, ইমেইল ইত্যাদি আনলিমিটেড হয়ে থাকে যা আপনি সাধারণত অন্যান্য হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছে থেকে পাবেন না। তাছাড়া পুতুল হোস্টে অন্যান্য হোস্টিং প্যাকেজ এবং ডোমেইন অনেক কম মুল্যে পাওয়া যায়।

২. ExonHost

যখন বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটা হোস্টিং প্রোভাইডার ছিলো তখন থেকে এক্সন হোস্ট হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে। বর্তমানেও এক্সন হোস্ট অনেক জনপ্রিয়। তবে এক্সন হোস্টের ওয়েব হোস্টিং গুলোর দাম সাধারণত অনেক বেশি। এক্সন হোস্ট থেকে আপনি হোস্টিং ছাড়াও সার্ভার, ডোমেইন, এসএসএল সার্টিফিকেট ইত্যাদি কিনতে পারবেন।

৩. BDWEBS

বিডি ওয়েবস ২০১৩ সাল থেকে হোস্টিং সেবা দিচ্ছে। অতএব যখন বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক হোস্টিং কোম্পানি ছিলো তখন থেকে হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে। বিডি ওয়েবস এর প্যাকেজ বাজেটের মধ্যে থাকলেও এর ব্যান্ডউইথ প্রচুর কম। আপনার ওয়েবসাইটে অনেক ভিজিটর আসলে আপনার ব্যান্ডউইথ ফুরিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকবে এবং আপনার ওয়েবসাইট অফলাইন হয়ে যাবে। বিডি ওয়েবস হোস্টিং ছাড়া আরোও অনেক কিছু সেল করে যেমন ডোমেইন, সার্ভার, এসএসএল সার্টিফিকেট, ওয়েব ডিজাইন সার্ভিস ইত্যাদি।

৪. Hostever

বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি গুলোর মধ্যে হোস্ট ইভার অন্যতম। আগে হোস্ট ইভার কোম্পানির নাম ছিলো কোড ফর হোস্ট। বর্তমানে এটি চেঞ্জ করে হোস্ট ইভার রাখা হয়েছে। হোস্ট ইভার ওয়েবসাইটের হোস্টিং প্যাকেজ গুলোর দাম তুলনামূলক অনেকটাই কম এবং ফিচার অনেক ভালো। হোস্ট ইভার থেকে আপনি হোস্টিং ছাড়াও উইন্ডোজ হোস্টিং, ASP.NET হোস্টিং, সার্ভার, ডোমেইন, কর্পোরেট হোস্টিং ইত্যাদি পাবেন। তাছাড়া হোস্ট ইভার ২৪/৭ সাপোর্ট সম্পুর্ন ফ্রিতে দেয়।

৫. Dianahost

বাংলাদেশের জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি গুলোর মধ্যে ডায়ানা হোস্ট একটি। এই ওয়েবসাইটের হোস্টিং প্যাকেজ গুলোর দাম অনেক কম। যারা নতুন তারা এই ওয়েবসাইটের হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া ডায়ানা হোস্ট থেকে কম মূল্যে ডোমেইন, সার্ভার, এসএসএল সার্টিফিকেট ইত্যাদি কিনতে পারবেন। ডায়ানা হোস্ট ২৪/৭ সাপোর্ট সম্পুর্ন ফ্রিতে দেয়।

কয়েকটি বিদেশী হোস্টিং কোম্পানি

আপনাদের অনেকের কাছে ডুয়াল কারেন্সি কার্ড অথবা পেপাল থাকতে পারে। আপনারা চাইলে বিদেশী হোস্টিং কোম্পানি গুলোর সাহায্যে হোস্টিং কিনতে পারেন। নিচে কয়েকটি বিদেশী হোস্টিং কোম্পানি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১. Namecheap

বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় ডোমেইন হোস্টিং সেবা প্রদানকারী হোস্টিং কোম্পানি গুলোর মধ্যে নেমচিপ একটি। নেমচিপের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নেমচিপ থেকে আপনি কম খরচে অনেক ভালো মানের হোস্টিং কিনতে পারবেন। তাছাড়া নেমচিপের একটি ভালো দিক হলো এখানে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়।

২. Hostinger

বর্তমানে কম টাকায় ভালো মানের হোস্টিং পেতে হলে অবশ্যই আপনি হোস্টিঙ্গার একবার দেখে নিবেন। হোস্টিঙ্গার অনেক কম টাকায় ভালো মানের হোস্টিং দিয়ে থাকে। তাছাড়া হোস্টিঙ্গারের ডোমেইন প্রাইস অনেক কম।

৩. Blue host

ওয়ার্ডপ্রেস নিজে ব্লু হোস্ট ওয়েবসাইটের হোস্টিং রিকোমেন্ড করে। ব্লু হোস্টের হোস্টিং সাধারণত খুব ফাস্ট হয়। মুলত এ কারণেই ওয়ার্ডপ্রেস ব্লু হোস্ট রিকোমেন্ড করে। আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে ব্লু হোস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

ব্লগ কি? কিভাবে ব্লগিং করে আয় করবেন?

কিভাবে হোস্টিং কিনতে হয়?

হোস্টিং কিনতে যে চাইলে যারা হোস্টিং প্রোভাইড করে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম, ই-মেইল, মোবাইল নাম্বার, অ্যাড্রেস এসব তথ্য দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অ্যাকাউন্ট তৈরি করা খুবই সহজ, আপনারা যেভাবে নিজের সম্পর্কে ইনফরমেশন ও ই-মেইল, পাসওয়ার্ড ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন সেখানেও সেভাবেই অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন। এজন্য তাদের ওয়েবসাইটে গেলেই Register অথবা sign up করার অপশন পাবেন, সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে log in করবেন। এরপর হোস্টিং এর বিভিন্ন প্যাকেজ দেখতে পারবেন, আপনারা চাইলে মাসিক কিংবা বাৎসরিক মেয়াদে হোস্টিং কিনতে পারবেন। যাইহোক, আপনার প্রয়োজন মতো কোন একটি প্যাকেজে গিয়ে buy অপশনে গেলে পেমেন্ট করার অপশন পেয়ে যাবেন, হোস্টিং প্রোভাইডার যদি বাংলাদেশি হয় তবে বিকাশ, নগদ, রকেট এসব মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে পেমেন্ট দিতে পারবেন, কিন্তু বিদেশি প্রোভাইডার হলে পেপ্যাল কিংবা ডুয়েল কারেন্সি যুক্ত কোন কার্ড দিয়ে পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে। যখন এর মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে যাবে তখন তারা আপনাকে হোস্টিং রিনিউ করার জন্য ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। আর তখন তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পেমেন্ট পরিশোধ করলে আবার সেটা ব্যবহার করতে পারবেন।

আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি হোস্টিং সম্পর্কে আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করবেন। এতক্ষণ ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Thanks for your comment ❤
Stay with us

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন